দেখুন ঢাকায় আমাদের মাত্র একটি ফ্ল্যাট আর ব্যাংকে বিশ ত্রিশ লাখ টাকা ক্যাশ পড়ে থাকলে আমরাই নিজের ছেলে মেয়ের বিয়েতে দশ থেকে বিশ লাখ টাকা অবধি খরচ করে ফেলি। আমাদের সম্পদের পার্সেন্টেজ করলে মেজর পর্শন, এমনকি যিনি দিন আনে দিন খায় তার সেভিংসের তুলনায় বিয়ের খরচ বেশি আর মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্তের আয়োজন তো চোখে পড়ার মতন বেশি, প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্টও হয় সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে এমনকি অন্যদের কাছথেকে নানানরকম সহযোগিতা অনুষ্ঠানের একটা স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই নোটিশ করা হয়, দেখা যায় আমন্ত্রিত অতিথিদের হোটেলের বিপরীতে পাড়া প্রতিবেশী আত্নীয় স্বজনের বাসাগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়, মানে আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখব বিয়ের আয়োজন নিয়ে আমরা কত বিশাল হুলস্থুল করে ফেলি!

বিষয়টা এমন না যে আধুনিক যুগের কারণে আমাদের ভিতর বিয়ের প্রোগাম নিয়ে এত এক্সসাইটমেন্ট এসেছে, হা কিছু মর্ডান টুলস তো স্বাভাবিকভাবেই যুক্ত হয়ে হইহুল্লোড় বাড়িয়েছে তবে শত বছর আগেও যখন আমরা প্রায় সবাই গরু গাড়িতে চড়তে অভ্যস্ত ছিলাম তখনো বিয়ে ছিল সমাজের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট, জমিজামা বিক্রি করে হলেও ধুমধাম করে বিয়ে দেয়া হত আর অনেক এলাকায় তো নিয়ম রেওয়াজ-ই চলতো পুরো এক সপ্তাহ জুড়ে। এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানের কিছু পুরাতন গান তো আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছে, যেমন-

লীলা বালী লীলা বালী ভর যুবতী সই গো
কি দিয়া সাজাইমু তোরে।
মাথা চাইয়া সিন্থি দিমু ঝাঝরি লাগাইয়া সই গো
কি দিয়া সাজাইমু তোরে।

অথবা এই গানটির কথাও বলা যায়-

গাও তোলো গাও তোলো কন্যা হে
কন্যা পেন্দো বিয়ার শাড়ি।
এই শাড়ি পিন্দিয়া যাইবেন
তোমার শ্বশুর বাড়ি কন্যা হে।।

এমন গান আরও অনেক আছে। আপনি বলতে পারেন সবই বুঝলাম কিন্তু আমাদের কেইসে এগুলো নূন্যতম সামাজিকতা করতেই হয়, না করে উপায় নেই! অথচ যদি উলটা প্রশ্ন করা হয়, কেন করতে হয়, এই আইন ধর্ম অথবা সমাজের কোন নীতিতে ছাপানো আছে? তখন দেখা যাবে মাথা চুলকানো ছাড়া আর কোন জবাব নেই ! কারণ আমরা স্বীকার করি কিংবা না করি, ব্যাপারাটার হুলস্থুলের ইতিহাসের বয়স হিসাব করলে তা বাংলাদেশ থেকেও বড়!

এবার তাহলে আম্বানি পরিবারের সম্পদের কথা ভাবা যাক! তাদের সম্পদের যে ব্যাপক বিস্তার তা হিসেবের বাহিরে রাখলেও তাদের পারসোনাল সম্পদের কিন্তু মেজর পর্শন খরচ হচ্ছে না, আসলে মেজর পর্শন তো দূরের কথা শক্তভাবে বলার মত পর্শনই খরচ হচ্ছে না!

তাহলে এত বেশি ক্যান চোখে লাগছে? 

এটাকে বলা যায় আমাদের কল্পনার একটা লিমিটেশন, এই ঘটনা যেই স্টেজের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তা সচারাচর আমাদের নেটওয়ার্কের আওতার বাহিরে। খেয়াল করলে দেখবেন, আমাদের গোল সেটেরও একটা লিমিটেশন আছে, মানে আমাদের জ্ঞান, শারিরীক শক্তি আমরা নিজেদের যেখানে দাড় করাতে বিনিয়োগ করি এবং অধিকাংশ সময়ে দাড়াতে পারিও না! আম্বানির ঘটনাগুলো তার থেকেও উপরের স্টেজের!

আমাদের চোখের সামনে হঠাৎ করে পাওয়ারফুল টর্চ লাইটের আলো ফেললে কিন্তু আমরা স্বাভাবিকভাবে তাকিয়ে থাকতে পারব না! তার মানে কি আলোর সাথে আমাদের পরিচিতি নেই? ভালোভাবেই আছে তবে সমস্যা হল লিমিটেশন। তেমনভাবেই মার্ক জাকারবার্গ, বিল গেটস, বলিউডের খান সাহেবরা, আন্তর্জাতিক স্টাররা এসে নাচানাচি করাটারে আদিখ্যেতা মনে হলেও তাদের জন্য রুটিন ওয়ার্ক টাইপ ব্যাপার, বরং তাদের আফসোস থাকতে পারে আরও গুছিয়ে আরও আন্তর্জাতিক মহলে সাড়া ফেলে করা গেল ভালো হতো! আর সবথেকে বড় কথা নিজ সামর্থ্যরে জানান দেয়া, পারসোনাল ব্রান্ড মার্কেটিং তো আছে আমি সেদিকে একেবারেই ফোকাস করলাম না, কারণ ব্রান্ডিং নানানভাবেই করা হয় কিন্তু দিনশেষে এটা একটি বিয়ে যা নিয়ে স্বয়ং আম্বানি পরিবার দারুণভাবে এক্সসাইটেড!

আরও অনেক কিছু বলা যেত, তবে মনে হল মোটামুটি মেইন থিমটা বলতে পেরেছি, বাস্তবতা হল দিনশেষে  আম্বানি পরিবার আমাদের লিমিটেশনরে চিনিয়ে দেয়, সেটা ভালো না খারাপ তা অন্য আলাপ! সেই আলাপ একেবারে ভিন্নভাবে করাই যায় কিন্তু এই লেখার কনসার্ন হচ্ছে সামাজিক ঘটনাগুলো যে মেসেজ দেয় আমরা সেটা নিতে পারছি কি-না, পড়তে পারছি কি-না।

@সাজ্জাদ হোসাইন খান।